নমস্কার বন্ধুরা, আমি zero to hero ব্লগ থেকে লিখছি। আজ আমি আপনাদের নিজের খারাপ সময়ে কী করে মনকে শান্ত রাখা যায় তার কয়েকটি উপায় বলব।
প্রথমেই আমি বলে রাখছি যে আমি মনস্তাত্ত্বিকের কোনো অভিজ্ঞ লোক নই, সুতরাং সমস্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক উপায় হয়তো আমি আপনাদের বলতে পারব না। কিন্তু আমি ততটুকুই বলতে পারব যতটুকু আমি নিজে প্রয়োগ করে উপকার পেয়েছি।চল শুরু করা যাক-
মনকে শান্ত রাখা- দেখ মন আমাদের কোনোদিনই চিন্তামুক্ত থাকে না। রোজই সারাক্ষণ আমরা কিছু না কিছু চিন্তা করেই যাই। আমি অনেক মনস্তত্ববিদের কাছে শুনেছি যে আমাদের মস্তিষ্ক দিনে প্রায় ষাটহাজারটা চিন্তা করে, এটা একটা স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের কথা বললাম। অনেকে এর থেকে বেশিও করে, অনেকে কমও করে। অনেকের চিন্তা একলাখ-দুলাখের উপরও চলে যায়, তখন সে নিজের মস্তিষ্কের কন্ট্রোল করতে পারে না, একেবারে ভয়ানক অবস্থা তৈরি হয়, বিজ্ঞান একেই হাই প্রেশার বলে। হাই প্রেশারের ফল হয় মারাত্মক! যাদের আছে তারা অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখা অভ্যাস করুন, অন্য কোনোকিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। জানবেন আপনি ভালো থাকলেই জগৎ ভালো থাকবে। সবসময় হয়তো চিন্তামুক্ত থাকা যায় না। আসলে আমাদের মস্তিষ্ক মনে হয় আমাদের কন্ট্রোলে চলে না! সে চোখের দ্বারা কিছু দেখলেই সেটা নিয়ে হাজারো চিন্তা শুরু করে দেয়, বলাবাহুল্য এগুলির মধ্যে অপ্রয়োজনীয় চিন্তাই বেশি। মানে ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনার মতো। আর এসব জিনিস সবসময় পরিষ্কার করাই উচিৎ নইলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাই আমাদের মস্তিষ্কও মাঝে মাঝে পরিস্কার করা উচিত, বেশি চিন্তা জমতে দেওয়া ভালো নয়।
কিন্তু খারাপ সময়ে আমাদের মস্তিষ্কে হাজারো অপ্রয়োজনীয় চিন্তা রাজ করে। আপনি হয়তো লক্ষ্য করে দেখবেন যে খারাপ সময়ে আপনার মস্তিষ্ক নেগেটিভ চিন্তাই বেশি করে। আপনি কিছুটা হলেও ভয় পান কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে।অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে বলবার মতো নয়।অতিরিক্ত ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে অনেকে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যাও করে বসে। নাহলে হাই প্রেশারের শিকার হয়ে যায়। প্রশ্ন হলো আপনি এখান থেকে বেরোবেন কী করে? অনেকে এইসময় কাউন্সিলর কিংবা মনস্তত্ববিদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন, এটা অতি উত্তম। আপনি যদি মনস্তত্ববিদের কাছে গিয়ে সমস্ত কিছু খোলাখুলি বলতে পারেন তাহলে এসমস্যা থেকে আজীবনের জন্য মুক্ত হতে পারেন। তাহলে ভবিষ্যতে এরকম সমস্যায় আবার পড়লে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে এসমস্যার সমাধান আছে বা এখান থেকে মুক্ত হওয়া যায়,আর এটাই যেকোনো চিকিৎসার প্লাস পয়েন্ট। আপনি তখন থেকেই সুস্থ হবেন যখন আপনি মনে করবেন আপনি সুস্থ আর তখন থেকেই মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাবেন যখন থেকে আপনার মনে নেগেটিভ চিন্তা বাসা বাধবে। সুতরাং always be positive. এবার এটা তো গেল একটা কথা, আপনি মনস্তত্ববিদের কাছে যেতে পারেন আর যাওয়ার আগে আপনার এলাকার সবথেকে ভালো মনস্তত্ববিদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিবেন তাহলে আপনার আরো ভালো উপকারের সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু যদি আপনার কাছে মনস্তত্ববিদের কাছে যাওয়ার মতো মূলধন না থাকে কিংবা অন্য কোনো কারণের জন্য যাওয়ার মতো অবস্থা না থাকে তখন কী করবেন? আমি এমন অনেককেই জানি যাদের কোনোকারণেই যাওয়া সম্ভব নয়! তো তারা কী করবেন? বসে বসে সমস্যার মধ্যে জীবন কাটাবেন? তাহলে তো আপনার চরম ক্ষতি হয়ে যাবে! আপনাকে কিছু তো একটা করতেই হবে! অামি তাদের জন্য সামান্য কয়েকটি উপায় বলছি-
১)আগে আপনি চিন্তামুক্ত থাকার অভ্যাস করুন- হয়তো আপনার এইসব নিয়ে কোনো আইডিয়া নেই। কিন্তু খারাপ সময়ে সবার প্রথমে এটা করা অত্যন্ত জরুরী কেননা খারাপ সময়ে সর্বদা নেগেটিভ চিন্তাই বেশি আসে। আর নেগেটিভ চিন্তা আপনাকে আরও বেশি গর্তের গভীরে নিয়ে যায়।আপনাকে এর থেকে যে করে হোক বাঁচতেই হবে। সুতরাং ভালো-খারাপ যেকোনো চিন্তা বয়কট করুন। কিন্তু চিন্তা বন্ধ করবেন কী করে? আমি একটা ফর্মূলা ব্যবহার করি এজন্য, এইসময় আমি প্রথম দশটা মিনিট শুধুমাত্র আমার শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে লক্ষ্য রাখি। আপনি দশমিনিট নয়, একমিনিটের জন্যই এই প্রক্রিয়াটা করুন। শুধু নিজের শ্বাসের দিকে মন দিন। কেননা লক্ষ্য করে দেখবেন যখন আপনার চিন্তা একটু বেশি হয়ে যায় কিংবা আপনি অধিক চিন্তা করতে থাকেন তখন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের স্প্রীডও বাড়তে থাকে। আর আপনি যদি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের স্প্রীড কমানোর দিকে নজর দেন অর্থাৎ আপনি যদি ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার বদলে হালকা করে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া শুরু করেন তাহলে আপনার সমস্ত চিন্তা আপনাআপনিই মিলিয়ে যাবে।কিন্তু কখনই যেন শ্বাসকে আটকাবেন না।প্রয়োজন পড়লে অনলাইনে শ্বাস নেওয়ার পদ্ধতিগুলো জেনেও নিতে পারেন। তাহলে এখন থেকেই শুরু করে দিন, শুধু ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার দিকে মন দিন।একমিনিট...,দুমিনিট...যতসময় যাবে,আস্তে আস্তে অভ্যাসটাকে বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। দেখবেন আপনি কত সুখী থাকতে পারবেন।
২)হাসবেন-'হাসি' এই একটা জিনিসই নিমেষে আপনার সমস্ত স্ট্রেসকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে।হাসুন!হাসি না পেলেও হাসার চেষ্টা করুন। কয়েকমিনিটের জন্য নিজের সমস্ত কিছু ভুলে যতপারেন হাসুন। অনলাইনে কিংবা টিভিতে বিখ্যাত কমেডিয়ানদের কমেডি দেখু
ন। আপনি যত হাসবেন,আপনার মন তত আস্তে আস্তে ভালো হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে।
৩)কয়েক মূহুর্তের জন্য নিজের সবকিছু ভুলে যান-আপনার কী কী দরকার- কিজন্য দরকার- সবকিছু ভুলে যান। ভুলে যান আপনি কে-সারাজীবনে কী কী করেছেন। শুধু মনে রাখুন আপনি একজন সম্পুর্ণ নতুন মানুষ। আগের মূহুর্তে আপনি যা করেছিলেন সেটা অতীত হয়ে গেছে আর পরের মূহুর্তে সেটাই হবে যেটা আপনি করবেন।প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্ত নতুন হয়।
এই কয়েকটি স্টেপ ফলো করলেই আপনি ব্যর্থতার মানসিক যন্ত্রণাটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এরপরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে আপনি কোনও অবসর সময়ে আপনার পুরনো ভুলের বিশ্লেষণ করতে পারেন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন-নেগেটিভ চিন্তাগুলো আপনার মাথায় কেন এসেছিলো?কী করে এই চরম সিদ্ধান্তটা আপনি নিয়েছিলেন যে এটা আপনার খারাপ সময়?
আমার অভিজ্ঞতা থেকে মনকে ঠিক রাখার আরো অনেক উপায় আমি অন্য কোনদিন লিখব।আপাতত আজকে এইটুকুই।আশা করছি এই article টা আপনার উপকারে আসবে।সবসময় হাসুন আর খুশিতে থাকুন।
শুভ রাত্রি।
(নীচে কয়েকটি ভিডিওর লিঙ্ক দেওয়া আছে। সময় করে প্লিজ দেখে নেবেন)